মেহেরপুরের বধ্যভূমি

মেহেরপুর সকারী কলেজ মাঠ বধ্যভূমি

স্বাধীনতা যুদ্ধকালে গোটা মেহেরপুর ছিল  পাক বাহিনীর নির্যাতন এর কেন্দ্র। স্থানীয় সরকারী কলেজ মাঠ ছিল এ খান কার সব চেয়ে বড় বধ্যভূমি ।এখানে পাকবাহিনীর অধিকাংশ স্বাধীনতা কর্মীদের ধরে এনে হত্যা করত। কলেজ মাঠের  মাঝ খানে একটি বিশাল আম বাগান এর ডালে মুক্তি যোদ্ধাদের প্রথমে পা বেঁধে টাংগানো হতো। এখানে অমানুষিক নির্যাতন  শেষে কলেজ এর একটি বদ্ধ ঘরে বন্দি রেখে এক  হত্যা করা হতো। শাধিনতার পর এই বধ্যভূমি তে মানুস এর মাথার খুলি , হার গড়, মাথার চুল  পওয়া যায় ।
মেহেরপুর  জেলা প্রশাসন কাযালয় বধ্যভূমি
মেহেরপুর  জেলা প্রশাসন কাযালয়  চত্বর ছিল পাক বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ও বধ্যভূমি।এই  বধ্যভূমি তে মেহেরপুর সদর উপজেলার  বুড়িপোতা  ইছাখালি ও গোভীপুর গ্রামের মুক্তি যোদ্ধা দের হত্যা করে পুতে রাখা হয়। যুদ্ধ শেষে এখান থেকে বহু নরকঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
ওয়াপদা মোড় বধ্যভূমি
মেহেরপুর  ওয়াপদা মোড় ছিল পাক বাহিনীর অন্যতম বধ্যভূমি । শহর এর বিভিন্ন এলাকা  থেকে লকজন ধরে এনে এই বধ্যভূমি হত্যা করা হতো ।  এখানে শহর ও তার আস পাস এলাকার মুক্তি যোদ্ধা জোড় করে হত্যা করে লাস পুতে রাখা হয়।
বাসষ্ট্যান্ড বধ্যভূমি,
মেহেরপুরের বাসষ্ট্যান্ড এলকায় ছিল পাকবাহিনীর একটি বধ্যভূমি। এখানে পাকিস্থানী হানাদাররা বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত বহু যাত্রীদের ধরে নিয়ে হত্যা করে। কিন্তু এই স্থানটির কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। সেই এলাকাতেই এখন বাসষ্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। স্বাধীনতার পর এখানে মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় পাওয়া যায়।
গোরস্থা পাড়া বধ্যভূমি

একান্তরে যুদ্ধকালীন মেহেরপুরে গোরস্থান পাড়ায় পাকহানাদার বাহিনীর নির্যাতনকে কেন্দ্র ও বধ্যভূমি ছিল। স্বাধীনতার পর এখান থেকে উদ্ধারকৃত মানুষের মাথার খুলি ও হাড়গোড় অন্যান্য গণকবর থেকে উদ্ধারকৃত হাড়গোড়ের সঙ্গে একটি কেন্দ্রীয় গণকবরে রাখা হয়। পৌর কবরস্থানের পাশেই এই গণকবরটি। এখন এখানে নির্মিত হয়েছে কেন্দ্রীয় স্মৃতি সৌধ।
জোড়পুকুরিয়া বধ্যভূমি
১৯৭১ সালের ২৮ জুলাই মেহেরপুরের গাংনী থানাধীন মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের জোড়পুকুরিয়া ষোলটাকা রাস্তার সংযোগস্থল এলাকা তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে গমণকারী শত শত নারী-পুরুষ-শিশুকে পাকহানাদার বাহিনীরা নির্মভাবে গুলি করে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর এখান থেকে শতাধিক মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার হয়। কিন্তু এই স্থানটি সংরক্ষণ না করার সেখানে গড়ে উঠেছে  নানান প্রতিস্তান।
মেহেরপুর ভোকেশনাল বধ্যভূমি
স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন মেহেরপুর ভোকেশনাল ট্রেনিং কলেজটি পাকবাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র ছিল। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধাদের চোখ বেঁধে ধরে এসে এখানে নির্যাতন করা হত। নির্যাতন শেষে শত শত মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করে লাশ ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে বিভিন্ন ডোবা ও পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে কিছু লাশ এখানে কবর দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর এখান থেকে শতাধিক মানুষের মাথা ও কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। কিন্তু এই জায়গাটি সংরক্ষণ করা হয়নি।
তেড়ঘরিয়া বধ্যভূমি
মুক্তিযুদ্ধ কালে অনেকেই মেহেরপুর সদর উপজেলার এখানকার সীমান্ত দিয়ে ভারতের আশ্রয়ের জন্য গেছে। এ সময় পাক বাহিনীর হাতে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ নারী-পুরুষ ধরা পড়ে। তেড়ঘরিয়া গ্রামের বিল কুলবর্তী স্থানে জড়ো করে পাক বাহিনীর এদের প্রকাশ্যে গুলি করে। পরে এটি গর্ত করে খুঁড়ে তাদেরকে গণকবর দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের পরে সেখানে অসংখ্য মানুষের হাড় পাওয়া যায়। স্থানটি সংরক্ষিত নেই বলে এখন খুঁজে পাওয়া যায় না।
মেহেরপুর কালাচাঁদপুর বধ্যভূমি
৭১ সালে রাজাকারদের ইন্ধনে এলাকা চাঁদপুরে পাকবাহিনী ধংসযজ্ঞ চালায়। এই এলাকায় অধিকাংশের বাড়ি পাকবাহিনী পুড়িয়ে দেয়। অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধাকে ধরিয়ে দেয় রাজাকাররা। পাকবাহিনী এই সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে চোখ বেঁধে একটি ঘরে নিয়ে সেখানে গুলিল করে হত্যা করে। পরে কালাচাঁদপুর সড়ক সংলগ্ন একটি স্থানে গর্থ করে মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ পুঁতে ফেলা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর সেখান থেকে অসংখ্য মানুষের হাড় কঙ্কাল উদ্ধার হয়। কিন্তু সংরক্ষিত না থাকায় এখন সেখানে গড়ে উঠেছে ঘরবাড়ি।
(তথ্য সূত্র:  মুক্তিযুদ্ধের যাদুঘর সংগৃহীত তথ্য সূত্র: একান্তরের বধ্যভূমি ও গণকবর- সুকুমার বিশ্বাস পৃ-১১২ যুদ্ধাপরাধ গণহত্যা ও বিচারের অন্বেষণ- ডা: এম এ হাসান, পৃ-৪০২। মুক্তিযুদ্ধ কোষ, চতুর্থ খন্ড- মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত, পৃ-১৬২, দৈনিক সংবাদ, ২১ মে ১৯৯২ ,  তোজাম্মেল আযম রচিত- মেহেরপুরের ইতিহাস গ্রন্থ। প্রথম খন্ড, পাতা ১৩৩ পৃ)
from:beautifulmeherpur

Comments

Popular posts from this blog

বলরাম হাড়ি এবং তাঁর জীবনদর্শন সুধীর চক্রবর্তী

মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন

রফিকুর রশীদ : জীবন ও শিল্প সাধনা-