হৃদয়ে মুজিবনগর-mujibnagar history, meherpur
mujibnagar,meherpur, mujibnagar history, meherpur, mujibnagar picture
হৃদয়ে মুজিবনগর
মো: আব্দুল হাই
বাঙালি জাতিসত্তার রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের সূচনাভূমি মুজিবনগর। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রতিরোধের প্রথম প্রহর মুজিবনগর। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ পাঠ হয়েছিল এখানেই। সর্বোপরি যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের রাজধানী মুজিবনগর। তাই নিজের অস্তিত্বকে জানতে জন্মকালীন বাংলাদেশের ইতিহাসকে নতুন করে আবিস্কার করতে এবং আত্মপরিচয়ের সেই ইতিহাসকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে মুজিবনগর হতে পারে আমাদের সবার কাক্সিক্ষত গন্তব্য। সুপ্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেওয়া যাক মুজিবনগর ভ্রমণের আদ্যোপ্রান্ত।
অবস্থান: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জনপদ মুজিবনগর। পূর্ববর্তী প্রশাসনিক বিভাজন অনুযায়ী বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমায় অবস্থিত। বর্তমান প্রশাসনিক পরিচিতি অনুযায়ী মেহেরপুর জেলা, মুজিবনগর উপজেলা।
উত্তরে মেহেরপুর সদর উপজেলা ও ভারত, দক্ষিণে মুজিবনগর উপজেলা ও ভারত, পূর্বে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা এবং পশ্চিমে ভারতের অবস্থান।
নামকরণ: মুজিবনগরের পূর্ববর্তী নাম ছিল বৈদ্যনাথতলা। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণের পরে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ দেশি-বিদেশি সাংবাদিক এবং সমবেত জনতার সামনে ৩০ মিনিটের এক উদ্দীপনাময় ভাষণ প্রদান করেন। তিনি বলেন, আজ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হবে এ বৈদ্যনাথতলা এবং এর নতুন নামকরণ হবে মুজিবনগর। সেদিন থেকেই বৈদ্যনাথতলা মুজিবনগর নামে পরিচিত।
ভ্রমণের সময়: ক্রান্তীয় আর্দ্রপ্রায় জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় উষ্ণ গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল বিরাজ করে। তাই মুজিবনগর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে বছরের যে কোনো সময়েই ভ্রমণ করা যেতে পারে।
যেভাবে যাবেন : রাজধানী ঢাকা থেকে মেহেরপুর সদরের দূরত্ব ৩১২ কিলোমিটার। সড়কপথে বিভিন্ন সংস্থার পরিবহনে ঢাকা থেকে মেহেরপুর পৌঁছাতে ৬ ঘন্টা ৩০ মিনিট থেকে ৭ ঘন্টা ৩০ মিনিট সময় লেগে যেতে পারে। যাতায়াতের দুটি পথ রয়েছে। গাবতলী থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে মেহেরপুর অথবা গাবতলী থেকে যমুনা সেতু হয়ে মেহেরপুর গমন। ভাড়া ৩৫০/- থেকে ৪০০/- টাকা। অতঃপর মেহেরপুর থেকে লোকাল বাসযোগে মুজিবনগর গমন। দূরত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার। ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। প্রধান প্রধান পরিবহন সংস্থা: পূর্বাশা, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স, দর্শনা ডিলাক্স, এম. এম. পরিবহন, মেহেরপুর ডিলাক্স, শ্যামলী পরিবহন, জে.আর পরিবহন প্রভৃতি। তবে জে.আর পরিবহনের কিছু গাড়ি সরাসরি মুজিবনগরে আসা-যাওয়া করে। ভ্রমণের শুরুতে এটি জেনে নিতে ভুলবেন না।
রাত্রি যাপন : মুজিবনগর কমপ্লেক্সের অদূরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের পর্যটন মোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারেন। ভাড়া এসি রুম ৬০০/- টাকা, নন এসি ৩০০/- টাকা। জেলা পরিষদ সচিবের পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে রেস্ট হাউস ‘সূর্যোদয়ে’ও থাকতে পারেন যা মুজিবনগর কমপ্লেক্স থেকে হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত।
যা দেখবেন : বাঙালির জাতিসত্তা অন্বেষণ ও প্রতিষ্ঠার যে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল ১৯৫২ থেকে, ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে তার রাজনৈতিক অভিষেক হয়েছিল। বলা যায় ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল এখানে বাঙালি জাতির জন্ম হয়েছিল। তাই কোনো কৃত্রিম স্থাপত্যকর্ম বা মনুমেন্ট দর্শন করতে না চাইলেও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই আবেগ ও ইতিহাসকে ধারণ করতে এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সূচনা ভূখ-টির স্পর্শ পেতে আপনাকে আসতে হবে মুজিবনগরে।
স্থাপনাসমূহ
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ : মুজিবনগর ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ সহ মুক্তিযুদ্ধের নানান ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল এটি উদ্বোধন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যেখানে গঠিত হয় সেখানে এই স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়েছে। এর স্থপতি তানভীর করিম।
১৬০ ফুট ব্যাসের গোলাকার স্তম্ভের ওপর মূল বেদীকে কেন্দ্র করে ২০ ইঞ্চি পুরু ২৩টি ত্রিভুজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে স্মৃতিসৌধটি গঠিত। দেয়ালগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়েছে যা উদীয়মান সূর্যের প্রতিকৃতিকে ধারণ করছে। ২৩টি দেয়াল আগস্ট ১৯৪৭ থেকে মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত এই ২৩ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে এখানে ৩০ লাখ পাথর বসানো হয়েছে। তাই মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে আপনি মুক্তিযুদ্ধের অনেক অকথিত ইতিহাসকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারবেন।
মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স : স্বাধীন বাংলাদেশ
from:
হৃদয়ে মুজিবনগর
মো: আব্দুল হাই
বাঙালি জাতিসত্তার রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের সূচনাভূমি মুজিবনগর। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রতিরোধের প্রথম প্রহর মুজিবনগর। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ পাঠ হয়েছিল এখানেই। সর্বোপরি যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের রাজধানী মুজিবনগর। তাই নিজের অস্তিত্বকে জানতে জন্মকালীন বাংলাদেশের ইতিহাসকে নতুন করে আবিস্কার করতে এবং আত্মপরিচয়ের সেই ইতিহাসকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে মুজিবনগর হতে পারে আমাদের সবার কাক্সিক্ষত গন্তব্য। সুপ্রিয় পাঠক আসুন জেনে নেওয়া যাক মুজিবনগর ভ্রমণের আদ্যোপ্রান্ত।
অবস্থান: বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জনপদ মুজিবনগর। পূর্ববর্তী প্রশাসনিক বিভাজন অনুযায়ী বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমায় অবস্থিত। বর্তমান প্রশাসনিক পরিচিতি অনুযায়ী মেহেরপুর জেলা, মুজিবনগর উপজেলা।
উত্তরে মেহেরপুর সদর উপজেলা ও ভারত, দক্ষিণে মুজিবনগর উপজেলা ও ভারত, পূর্বে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা এবং পশ্চিমে ভারতের অবস্থান।
নামকরণ: মুজিবনগরের পূর্ববর্তী নাম ছিল বৈদ্যনাথতলা। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণের পরে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ দেশি-বিদেশি সাংবাদিক এবং সমবেত জনতার সামনে ৩০ মিনিটের এক উদ্দীপনাময় ভাষণ প্রদান করেন। তিনি বলেন, আজ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হবে এ বৈদ্যনাথতলা এবং এর নতুন নামকরণ হবে মুজিবনগর। সেদিন থেকেই বৈদ্যনাথতলা মুজিবনগর নামে পরিচিত।
ভ্রমণের সময়: ক্রান্তীয় আর্দ্রপ্রায় জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় উষ্ণ গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল বিরাজ করে। তাই মুজিবনগর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে বছরের যে কোনো সময়েই ভ্রমণ করা যেতে পারে।
যেভাবে যাবেন : রাজধানী ঢাকা থেকে মেহেরপুর সদরের দূরত্ব ৩১২ কিলোমিটার। সড়কপথে বিভিন্ন সংস্থার পরিবহনে ঢাকা থেকে মেহেরপুর পৌঁছাতে ৬ ঘন্টা ৩০ মিনিট থেকে ৭ ঘন্টা ৩০ মিনিট সময় লেগে যেতে পারে। যাতায়াতের দুটি পথ রয়েছে। গাবতলী থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে মেহেরপুর অথবা গাবতলী থেকে যমুনা সেতু হয়ে মেহেরপুর গমন। ভাড়া ৩৫০/- থেকে ৪০০/- টাকা। অতঃপর মেহেরপুর থেকে লোকাল বাসযোগে মুজিবনগর গমন। দূরত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার। ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। প্রধান প্রধান পরিবহন সংস্থা: পূর্বাশা, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স, দর্শনা ডিলাক্স, এম. এম. পরিবহন, মেহেরপুর ডিলাক্স, শ্যামলী পরিবহন, জে.আর পরিবহন প্রভৃতি। তবে জে.আর পরিবহনের কিছু গাড়ি সরাসরি মুজিবনগরে আসা-যাওয়া করে। ভ্রমণের শুরুতে এটি জেনে নিতে ভুলবেন না।
রাত্রি যাপন : মুজিবনগর কমপ্লেক্সের অদূরে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের পর্যটন মোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারেন। ভাড়া এসি রুম ৬০০/- টাকা, নন এসি ৩০০/- টাকা। জেলা পরিষদ সচিবের পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে রেস্ট হাউস ‘সূর্যোদয়ে’ও থাকতে পারেন যা মুজিবনগর কমপ্লেক্স থেকে হাঁটা দূরত্বে অবস্থিত।
যা দেখবেন : বাঙালির জাতিসত্তা অন্বেষণ ও প্রতিষ্ঠার যে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল ১৯৫২ থেকে, ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে তার রাজনৈতিক অভিষেক হয়েছিল। বলা যায় ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল এখানে বাঙালি জাতির জন্ম হয়েছিল। তাই কোনো কৃত্রিম স্থাপত্যকর্ম বা মনুমেন্ট দর্শন করতে না চাইলেও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই আবেগ ও ইতিহাসকে ধারণ করতে এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সূচনা ভূখ-টির স্পর্শ পেতে আপনাকে আসতে হবে মুজিবনগরে।
স্থাপনাসমূহ
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ : মুজিবনগর ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ সহ মুক্তিযুদ্ধের নানান ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল এটি উদ্বোধন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার যেখানে গঠিত হয় সেখানে এই স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়েছে। এর স্থপতি তানভীর করিম।
১৬০ ফুট ব্যাসের গোলাকার স্তম্ভের ওপর মূল বেদীকে কেন্দ্র করে ২০ ইঞ্চি পুরু ২৩টি ত্রিভুজাকৃতি দেয়ালের সমন্বয়ে স্মৃতিসৌধটি গঠিত। দেয়ালগুলো সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়েছে যা উদীয়মান সূর্যের প্রতিকৃতিকে ধারণ করছে। ২৩টি দেয়াল আগস্ট ১৯৪৭ থেকে মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত এই ২৩ বছরের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে এখানে ৩০ লাখ পাথর বসানো হয়েছে। তাই মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে আপনি মুক্তিযুদ্ধের অনেক অকথিত ইতিহাসকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারবেন।
মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স : স্বাধীন বাংলাদেশ
from:
Greater Kushtia news
amd amadermeherpur
Comments
Post a Comment