মেহেরপুরে যৌনদস্যুদের থাবায় রক্তাক্ত বাবা..

.মেহেরপুর সংবাদদাতা : ওরা এ পৃথিবীরই। দেখতে ঠিক মানুষের মতোই। অনেকেই মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকে ওদের দিকে। দৃশ্যমান তারুণ্যের সৌন্দর্যও আছে। আছে ওদের স্মার্টনেস, আধুনিকতা। আর তা সমাজের আর পাঁচজনের চেয়ে হয়তো বেশিই।

কিন্তু না, ওরা আর দশজনের চেয়ে আলাদা, অপ্রতিরোধ্য। অনেক সময় ওদের দমানো কিংবা থামানো যায়না। বিশেষত, যখন কোনো সুন্দরী কিশোরী কিংবা তরুণী ওদের চোখে পড়ে, পাশ দিয়ে হেঁটে যায়, ওরা উন্মাদ হয়ে যায়। অন্য এক পৃথিবীর বাসিন্দা হয়ে যায়। যে পৃথিবী ভয়াবহ অমানবিক, পাশবিকতায় পরিপূর্ণ। ওরা হয়ে পড়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য।

কেননা ওরা যে যৌনদস্যু। যৌনতা ওদের হিংস্র থেকে হিংস্রতর করে তোলে। ঠিক এমনই দুই যৌনদস্যুর হিংস্রতায় হতবাক হয়ে পড়েছেন মেহেরপুরের গাংনী ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্রীর বাবা, চাচাত ভাই আর পুরো পরিবার।

মেয়েকে দস্যুদের কবল থেকে রক্ষা করতে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে ছাত্রীর বাবা আর চাচাতো ভাইকে। লড়াই করতে হচ্ছে মৃত্যুর সঙ্গে।

ঘটনাটি শনিবার দুপুরের। গাংনী ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী উর্মী প্রতিদিনের মতোই সকালে কলেজে যান। ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে হাসাহাসিতে মেতেও ছিলেন। দুপুরের দিকে ক্লান্ত-ক্ষুধার্ত হয়ে ফিরছিলেন বাড়ি।

কিন্তু উর্মী কি জানতেন তার প্রিয় ক্যাম্পাসেই দাঁড়িয়ে তার দিকে পাশবিক লোভাতুর চোখে তাকিয়ে আছে দুই যৌনদস্যু। আর ওই ছদ্মবেশি হিংস্র পশু তো আর কেউ নয়- তার পাশের মহল্লা শিশিরপাড়ারই হাসিবুল আর মওদুদ আহমেদ রিকু। কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি আর অশ্লীল ইঙ্গিতে এগিয়ে এসে তাকে জাপটে ধরতে চায়। পাশবিক চাহনি দেখে ভীত হয়ে পড়ে উর্মী। যেনো পালাবার পথ খুঁজে ফেরে।

এক পর্যায়ে দস্যুদের ভয়াবহ থাবা থেকে নিজেকে মুক্ত করার প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। কিন্তু হার মানতে হয়।

উর্মীর ওপর যৌন নিপীড়নের খবরটি পৌঁছে যায় পরিবারের লোকজনের কাছে। ছুটে আসেন বাবা মহিবুল। তার সঙ্গে হাঁপাতে হাঁপাতে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছে উর্মীর চাচাতো ভাই একই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তানভির। এসেই সে ঘটনার প্রতিবাদ জানায়।

কিন্তু ওরা যে যৌনদস্যু। ওদের দস্যুপনায় বাধা দিতে নেই! পৃথিবীটা ওদেরই দখলে! ওরাও হয়তো কোনো মায়ের সন্তান, কিন্তু মাকে চেনে না। ওদেরও আছে কোনো বোন, কিন্তু বোন নামের শব্দের সঙ্গে ওদের পরিচয়ই নেই। ওদেরও কাছে পৃথিবীর সব নারীই হয়তো এক। ভোগের কিংবা উপভোগের। ওদেরও হয়তো আছে বাবা, চাচা। কিন্তু তারা হয়তো শুধুই প্রতিদ্বন্দ্বী!

আর তাই যৌনদস্যু হাসিবুল আর রিকুর রাজ্যে হঠাৎ ঢুকে পড়া উর্মীর বাবা আর চাচাতো ভাইয়ের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে তারা। ধারালো রামদা দিয়ে কুপিয়ে তাদের হত্যার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে উর্মীর ক্যাম্পাস রক্তাক্ত হয় বাবা আর ভাইয়ের রক্তে। রক্ত দেখেই হয়তো মনটা ভালো হয়ে যায় হাসিবুল আর রিকুর! বীরদর্পে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়।

এরপর ভীত সন্ত্রস্ত লোকজন সেখানে জটলা করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তানভিরকে প্রথমে কুষ্টিয়া মেডিকেলে পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

এ ঘটনা জানতে পারেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম। তিনি পুলিশকে নির্দেশ দেন ওই দুই দস্যুকে আটক করতে। পরে তাদের বিরুদ্ধে বসান ভ্রাম্যমাণ আদালত। রিকুর বিরুদ্ধে আদেশ দেন মাত্র এক বছরের কারাদণ্ডের। অবশ্য আরেক বীর হাসিবুল পালিয়ে গিয়ে বেঁচেই গেছে। সে বছর খানেক হয়তো একাই চালাবে তার প্রিয় যৌনমিশন। যতদিন না জেল থেকে বেরিয়ে আসে রিকু।

চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ার মতোই এলাকার লোকজনের উত্তেজনা কিছুটা বেড়ে যায়। তবে তাদের সে ‘উত্তেজনা’ কিসের তারই বা ব্যাখ্যা কি! অবশ্য পুলিশ তাদের দায়িত্ব বরাবরের মতোই পালন করেছে। এলাকার অনাকাঙ্খিত উত্তেজনা প্রশমন করতে অতিরিক্তি সদস্য মোতায়েন করেছে।

যৌননিপীড়নের এসব ঘটনা এলাকার টিনেজার আর তরুণদের কাছে ফুল থেকে মধু কিংবা বিষ সংগ্রহের মতোই ছড়িয়ে পড়ে। অপেক্ষা করে থাকতে হবে আরেকটি ঘটনার জন্য। কেননা, রিকু আর হাসিবুলের সঙ্গী-সাথীদের সংখ্যা দিন বাড়েই, কমে না।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুল আলম গর্বের সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন দুষ্টু রিকুর এক বছরের জেল হয়েছে। তবে হাসিবুল বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। কারণ হাসিবুলের বাড়ি তো চাঁদের দেশে নয়। এলাকারই কোথাও হয়তো দুষ্টু ছেলেটা লুকিয়ে আছে। কি প্রয়োজন তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার! যাক না কিছুদিন। মানুষের স্মৃতিশক্তি যে বড় দুর্বল।

source: http://www.hello-today.com/43422#.UnVMRSeykcR

Comments

Popular posts from this blog

বলরাম হাড়ি এবং তাঁর জীবনদর্শন সুধীর চক্রবর্তী

মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন

রফিকুর রশীদ : জীবন ও শিল্প সাধনা-