“ভৈরব! এখন আই.সি.ইউ-তে”


ভৈরব! এখন আই.সি.ইউ-তে
ভৈরব নামের নদীটি এখন আর নাই বললেই চলে। নদীর পরিবর্তে তাকে এখন ভৈরব আবাদ কেন্দ্র অথবা ভৈরব মডেল টাউন বলতে পারি। এটা বলার মূল কারণ হচ্ছে- যে যার মত করে ভৈরবকে দখল করে চাষাবাদ করছে, যেটুকু অংশে পানি দেখা যেতো সেটাও আজ ভরাট। দিনে দিনে শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানুষ নদীর তীরে তৈরী করছে আবাসস্থল এবং সেটাকে আমরাভৈরব মডেল টাউনবলতে পারি অনায়াসে। বাংলাদেশের ছোট্ট জেলা শহর মেহেরপুরকে ঢাকার সাথে তুলনা করতে খুব বেশী দিন সময় লাগবে না। তুলনাটি হবে এমনই -সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা শহর যেমন পানিতে ডুবে যায়, আমাদের স্বপ্নের মেহেরপুর শহরটির অবস্থাও তাই হবে। 

এই নদীর পানি দিয়ে কৃষকেরা চাষাবাদ করতো, জেলেরা মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো এবং এসকল মাছের দামও ছিল মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। কিন্তু আজ ভৈরব নদীর কথা ভাবতেই মনের ভিতর কেমন যেন করে ওঠে নদীর দুই কুলের জমির মালিকই নদীকে ভরাট করতে করতে নিজের জমি বানিয়ে নিয়েছে। নাতি-নাতনিদের একদিন বুক ফুলিয়ে বলবে এখান থেকে যতদূর চোখ চায় সব জমির মালিক আমি। ভৈরব আজ সবুজ ফসলের নিচে চাপা পড়ে আছে। চিৎকার করে কিছু বলার চেষ্টা করলেই তার মুখে লাঙ্গলের ফাল ঢুকিয়ে চুপ করানো হচ্ছে। আর তখনই রক্তাক্ত অবস্থায় ভৈরবের অবস্থা আই.সি.ইউ-তে ভর্তি থাকা রোগীর মতো। কৃত্রিম শ্বাস চলতে থাকে। যখন সে সুস্থ্য হওয়ার চেষ্টা করে, তখন আশেপাশের এলাকাকে প্লাবিত করে দেয় কিন্তু কি আর হবে নিজের বাসস্থল মাটি দ্বারা আস্তে আস্তে ভরাট হওয়ার কারণেই সে বেশিদিন স্থায়ীভাবে থাকতে পারে না। কিছুদিন পর আবার হারিয়ে যায় সেই সবুজ ফসলের নিচে। লাঙ্গলের ফাল আর গরুর পায়ের নিচে তাকে থাকতে হয় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে। আমাদের সম্মিলিত চেষ্টায় পারে আই.সি.ইউ-তে থাকা মৃত প্রায় ভৈরবকে বাঁচাতে। এজন্য কাউকে না কাউকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, ছেড়ে দিতে হবে দখল করা ভৈরবের জমি। আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। নইলে কখনও ভৈরব তার আসল চেহারা ফিরে পাবে না, দিনে দিনে বিলীন হবে তার অস্তিত্ব। - রানা বাবু বালকfrom: jago meherpur

Comments

Popular posts from this blog

বলরাম হাড়ি এবং তাঁর জীবনদর্শন সুধীর চক্রবর্তী

মুন্সী শেখ জমিরউদ্দীন

রফিকুর রশীদ : জীবন ও শিল্প সাধনা-