রফিকুর রশীদ : জীবন ও শিল্প সাধনা-
রফিকুর রশীদ : জীবন ও শিল্প সাধনা
আবদুল্লাহ আল আমিন
sir Rofiqur roshid
বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে রফিকুর রশীদের আত্মপ্রকাশ সত্তর দশকের শেষ ভাগে পত্র পত্রিকায় গল্প লেখা দিয়ে। প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘দুঃস্বপ্ন’ রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক বার্তায় (অধুনালুপ্ত) ১৯৭৭ সালে ছাপা হয়। তারপর প্রবল অনুরাগ আর নিষ্ঠা নিয়ে সাড়ে তিন দশক ধরে লিখে চলেছেন। এই কাল পর্বে তিনি দু’হাত ভরে লিখেছেন অজ¯্র ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গান। তবে গল্প লিখতে ভালবাসেন বেশি। বলা যায় এসব কারণে তিনি বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে ক্রমশ: অনিবার্য হয়ে উঠেছেন। দেশের প্রথম শ্রেণির অধিকাংশ দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকী, জনপ্রিয় লিটলম্যাগ, ঢাকা-কলকাতার সাহিত্য পত্রিকায় তার লেখা নিয়মিত বের হচ্ছে। সত্তর দশকের শেষ দিকে লেখালেখি শুরু করলেও সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি পান নব্বই দশকের প্রারম্ভে। বহুমাত্রিক সৃজন কুশলতার অধিকারী রফিকুর রশীদ নানা বিষয় নিয়ে লিখেছেন, তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য গল্প ও উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র, জসীমউদ্দীন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের জীবনালেখ্য নিয়ে সুন্দর সুন্দর গল্প লিখেছেন। বাংলাদেশের মানুষ, তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে তার গল্প উপন্যাসে। সখে নয়, যাপিত জীবনকে মূর্ত করে তোলার চেষ্টা থেকেই শিল্পের পথে তার পথচলা। সাহিত্য ও শিল্পের এই নিবেদিত কর্মী ঢাকার বাইরে অবস্থান করেও বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে অন্যতম প্রধান পুরুষে পরিণত হয়েছেন।
তাঁর গল্প সম্পর্কে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘রফিকুর রশীদের গল্প আমাকে স্পর্শ করে। কখনো কখনো রীতিমত নাড়া দেয়। নতুন রীতির গল্প বলে কিছু আছে কিনা জানি না, কিন্তু তার নামে এক সময় নানা রকম ভাঙাভাঙি হয়েছিল, গল্পের কাঠামো, ভাষা, প্রকরণ এই সব নিয়ে নানা পরীক্ষার চেষ্টা। রফিকুর এসবের মধ্যে যাননি। প্রচলিত চেনারীতির মধ্যে থেকেই তিনি গল্প লিখেছেন। আমাদের যেটুকু যেভাবে তিনি দেখতে পেয়েছেন, সেটুকুই তিনি খুব সবলভাবে তুলে ধরেছেন। তার গল্পগুলো জীবনকে চিনিয়ে দেবে একদিকে, অন্যদিকে যা চিনি না তা একেবারে চোখের সামনে এনে দেবে। নিরীক্ষাপ্রবণ গদ্যের ভাঙাগড়া অপেক্ষা, জীবনের প্রাপ্তির আনন্দ, অপ্রান্তির বেদনা এবং জীবন যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত, ক্লেদ-কান্তি জর্জর নাগরিক মধ্যবিত্ত ও দারিদ্র্যক্লিষ্ট গ্রামীণ জীবন নানামাত্রায় আলোকিত করা তার গল্পের মূল বৈশিষ্ট্য।
রফিকুর রশীদের জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর। পিতা গোলাম রসুল ছিলেন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, মাতা রওশন আরা সুগৃহিনী। তাদের পূর্ব পুরুষের আদি নিবাস নদীয়ার করিমপুরে। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর তার বাবা গাংনী থানার গাড়াডোব গ্রামে চলে আসেন। তাদের পরিবারকে কৃষিজীবীই বলা যেতে পারে। যদিও তার বাবা ভূমি অফিসে চাকুরী করতেন। রফিকুর রশীদ গাড়াডোব প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গাড়াডোব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পরে গাংনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্টিক পরীক্ষায় পাশ করেন। মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স সহ ¯œাতক (১৯৭৯) ও ¯œাতকোত্তর (১৯৮০) ডিগ্রী লাভ করেন। কর্মজীবন শুরু করেন সিলেটের এক চা বাগানের সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। অচিরেই মোহ ভঙ্গ হয় এবং চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে আসেন। ১৯৮৩ সালে কলেজ শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করেন।
রফিকুর রশীদ ছাত্র জীবন থেকেই সাহিত্য-প্রাণিত, প্রফেসর আনছার-উল হকের প্রেরণায় কবি হিসেবে তার অভিষেক কলেজ জীবনে। সহপাঠী বন্ধুরা মিলে অরুণিমা নামে যে দেওয়াল পত্রিকা বের করেন সেখানেই তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তারপর কবিতা ছেড়ে তিনি ঢুকে পড়েন কথাসাহিত্যের অতুল বৈভবময় সৃষ্টিমুখর ভুবনে। তবে ছোটগল্প ছাড়াও লিখে চলেছেন উপন্যাস, শিশু সাহিত্য, নাটক, প্রবন্ধ, গান প্রভৃতি। সম্পাদনা ও গবেষণার অভিজ্ঞতাও তার রয়েছে। ছোটগল্প ও শিশু সাহিত্যে অবদানের জন্য লাভ করেন ফিলিপস সাপ্তাহিক ২০০০, গল্প লেখা পুরস্কার ২০০২, এম নুরুল কাদের শিশু সাহিত্য পুরস্কার ২০০৩, চন্দ্রবতী একাডেমী সম্মাননা ২০০৬, কাজী কাদের নওয়াজ জন্মশতবর্ষ সম্মাননা ২০০৯, কথা সাহিত্য কেন্দ্র পদক ২০১২, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার ২০১৩।
from. greater kushtia news
আবদুল্লাহ আল আমিন
sir Rofiqur roshid
বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে রফিকুর রশীদের আত্মপ্রকাশ সত্তর দশকের শেষ ভাগে পত্র পত্রিকায় গল্প লেখা দিয়ে। প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘দুঃস্বপ্ন’ রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক বার্তায় (অধুনালুপ্ত) ১৯৭৭ সালে ছাপা হয়। তারপর প্রবল অনুরাগ আর নিষ্ঠা নিয়ে সাড়ে তিন দশক ধরে লিখে চলেছেন। এই কাল পর্বে তিনি দু’হাত ভরে লিখেছেন অজ¯্র ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গান। তবে গল্প লিখতে ভালবাসেন বেশি। বলা যায় এসব কারণে তিনি বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে ক্রমশ: অনিবার্য হয়ে উঠেছেন। দেশের প্রথম শ্রেণির অধিকাংশ দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকী, জনপ্রিয় লিটলম্যাগ, ঢাকা-কলকাতার সাহিত্য পত্রিকায় তার লেখা নিয়মিত বের হচ্ছে। সত্তর দশকের শেষ দিকে লেখালেখি শুরু করলেও সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি পান নব্বই দশকের প্রারম্ভে। বহুমাত্রিক সৃজন কুশলতার অধিকারী রফিকুর রশীদ নানা বিষয় নিয়ে লিখেছেন, তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য গল্প ও উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র, জসীমউদ্দীন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের জীবনালেখ্য নিয়ে সুন্দর সুন্দর গল্প লিখেছেন। বাংলাদেশের মানুষ, তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে তার গল্প উপন্যাসে। সখে নয়, যাপিত জীবনকে মূর্ত করে তোলার চেষ্টা থেকেই শিল্পের পথে তার পথচলা। সাহিত্য ও শিল্পের এই নিবেদিত কর্মী ঢাকার বাইরে অবস্থান করেও বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে অন্যতম প্রধান পুরুষে পরিণত হয়েছেন।
তাঁর গল্প সম্পর্কে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘রফিকুর রশীদের গল্প আমাকে স্পর্শ করে। কখনো কখনো রীতিমত নাড়া দেয়। নতুন রীতির গল্প বলে কিছু আছে কিনা জানি না, কিন্তু তার নামে এক সময় নানা রকম ভাঙাভাঙি হয়েছিল, গল্পের কাঠামো, ভাষা, প্রকরণ এই সব নিয়ে নানা পরীক্ষার চেষ্টা। রফিকুর এসবের মধ্যে যাননি। প্রচলিত চেনারীতির মধ্যে থেকেই তিনি গল্প লিখেছেন। আমাদের যেটুকু যেভাবে তিনি দেখতে পেয়েছেন, সেটুকুই তিনি খুব সবলভাবে তুলে ধরেছেন। তার গল্পগুলো জীবনকে চিনিয়ে দেবে একদিকে, অন্যদিকে যা চিনি না তা একেবারে চোখের সামনে এনে দেবে। নিরীক্ষাপ্রবণ গদ্যের ভাঙাগড়া অপেক্ষা, জীবনের প্রাপ্তির আনন্দ, অপ্রান্তির বেদনা এবং জীবন যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত, ক্লেদ-কান্তি জর্জর নাগরিক মধ্যবিত্ত ও দারিদ্র্যক্লিষ্ট গ্রামীণ জীবন নানামাত্রায় আলোকিত করা তার গল্পের মূল বৈশিষ্ট্য।
রফিকুর রশীদের জন্ম ১৯৫৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর। পিতা গোলাম রসুল ছিলেন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, মাতা রওশন আরা সুগৃহিনী। তাদের পূর্ব পুরুষের আদি নিবাস নদীয়ার করিমপুরে। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর তার বাবা গাংনী থানার গাড়াডোব গ্রামে চলে আসেন। তাদের পরিবারকে কৃষিজীবীই বলা যেতে পারে। যদিও তার বাবা ভূমি অফিসে চাকুরী করতেন। রফিকুর রশীদ গাড়াডোব প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গাড়াডোব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পরে গাংনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্টিক পরীক্ষায় পাশ করেন। মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স সহ ¯œাতক (১৯৭৯) ও ¯œাতকোত্তর (১৯৮০) ডিগ্রী লাভ করেন। কর্মজীবন শুরু করেন সিলেটের এক চা বাগানের সহকারী ম্যানেজার হিসেবে। অচিরেই মোহ ভঙ্গ হয় এবং চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে আসেন। ১৯৮৩ সালে কলেজ শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করেন।
রফিকুর রশীদ ছাত্র জীবন থেকেই সাহিত্য-প্রাণিত, প্রফেসর আনছার-উল হকের প্রেরণায় কবি হিসেবে তার অভিষেক কলেজ জীবনে। সহপাঠী বন্ধুরা মিলে অরুণিমা নামে যে দেওয়াল পত্রিকা বের করেন সেখানেই তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তারপর কবিতা ছেড়ে তিনি ঢুকে পড়েন কথাসাহিত্যের অতুল বৈভবময় সৃষ্টিমুখর ভুবনে। তবে ছোটগল্প ছাড়াও লিখে চলেছেন উপন্যাস, শিশু সাহিত্য, নাটক, প্রবন্ধ, গান প্রভৃতি। সম্পাদনা ও গবেষণার অভিজ্ঞতাও তার রয়েছে। ছোটগল্প ও শিশু সাহিত্যে অবদানের জন্য লাভ করেন ফিলিপস সাপ্তাহিক ২০০০, গল্প লেখা পুরস্কার ২০০২, এম নুরুল কাদের শিশু সাহিত্য পুরস্কার ২০০৩, চন্দ্রবতী একাডেমী সম্মাননা ২০০৬, কাজী কাদের নওয়াজ জন্মশতবর্ষ সম্মাননা ২০০৯, কথা সাহিত্য কেন্দ্র পদক ২০১২, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার ২০১৩।
from. greater kushtia news
Comments
Post a Comment